ল্যাসিক কি? কখন করা উচিত, খরচ কত, কিভাবে করে – চোখের ল্যাসিক সার্জারির পূর্ণ গাইড

ল্যাসিক কি ও কিভাবে করে? চোখের মাইনাস পাওয়ার বা দৃষ্টিশক্তি ঠিক করতে ল্যাসিক সার্জারি কাদের জন্য উপযুক্ত, খরচ কত ও কখন করা উচিত – জেনে নিন একসাথে।

চশমার বিকল্প হিসেবে ল্যাসিক হলো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। যা মানুষকে মুহূর্তেই চশমার বোঝা থেকে মুক্তি দিতে পারে। চোখের পাওয়ার জনিত সমস্যা সমাধানে ল্যাসিক একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই ব্লগপোস্টে প্রথমেই Lasik কি ও একটি 3D ভিডিওর মাধ্যমে ল্যাসিক এর ধারণা নেবো এবং বিস্তারিত জানবো।

ল্যাসিক কি? (What is LASIK?)

ল্যাসিক (LASIK) হচ্ছে একটি আধুনিক লেজার সার্জারি যার মাধ্যমে চোখের কর্নিয়ার গঠন পরিবর্তন করে মাইনাস পাওয়ার (Myopia: দূরে দেখার সমস্যা), প্লাস পাওয়ার (Hyperopia: কাছে দেখার সমস্যা), এবং অস্টিগমাটিজম (Astigmatism: দৃষ্টিজনিত গোলযোগ, যেখানে কর্নিয়া বা লেন্সের বাঁকানো গঠন সমস্যা) - এর চিকিৎসা করা হয়। ল্যাসিক সার্জারিতে চোখে কত অতিরিক্ত লেন্স বা উপাদান বসানো হয়না, শুধু লেজার রশ্নি দিয়ে চোখের কর্নিয়ার গঠন পরিবর্তন করে পাওয়ার জনিত সমস্যা সমাধান করা হয়। এই অপারেশনের পর চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স এর প্রয়োজন হয় না।

ল্যাসিক সার্জারি একটি অত্যন্ত নিরাপদ ও দ্রুত প্রক্রিয়া, যেখানে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না, অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই এবং ইনজেকশন বা ব্যান্ডেজও লাগে না। শুধুমাত্র চোখে অ্যানাস্থেটিক ড্রপ দিয়ে চোখ অবশ করে এই সার্জারি সম্পন্ন করা হয়। দুই চোখের ল্যাসিক করতে মোট সময় লাগে মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট, যেখানে প্রতি চোখে লেজার প্রয়োগ হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। অপারেশনের পর প্রাথমিক বিশ্রাম নিয়ে অর্ধ ঘণ্টার মধ্যেই রোগী বাসায় ফিরে যেতে পারেন। এমনকি পরদিন চোখ দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে কোনো অপারেশন হয়েছে – এতটাই নিখুঁত ও ঝুঁকিমুক্ত এই প্রক্রিয়াটি।

ল্যাসিক সার্জারির কিভাবে সম্পন্ন হয় তার একটি 3D ভিডিও

📅 কখন ল্যাসিক করা উচিত?

  • বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। 
  • চশমার পাওয়ার শেষ ১ বছরে স্থির থাকতে হবে।
  • যাদের চোখে মাইনাস বা প্লাস পাওয়ার রয়েছে, এবং কন্টাক্ট লেন্স বা চশমা ছাড়াই দেখতে চান।
  • গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
  • চোখে কোনো সংক্রমণ বা গুরুতর সমস্যা থাকলে ল্যাসিক করা নিষেধ।

ল্যাসিক (LASIK) সার্জারিতে যেসব পাওয়ার কারেকশন সম্ভব:

সমস্যার ধরন পাওয়ার পরিসীমা
নিকটদৃষ্টিবদ্ধতা (Myopia) –০.৫০ থেকে –১৪.০০ ডায়পটারস পর্যন্ত
দূরদৃষ্টিবদ্ধতা (Hypermetropia) +১.০০ থেকে +৭.০০ ডায়পটারস পর্যন্ত
বিষমদৃষ্টিতা (Astigmatism) –১.০০ থেকে –৭.০০ ডায়পটারস পর্যন্ত

💰 ল্যাসিক অপারেশনের খরচ কত?

বাংলাদেশে ল্যাসিক সার্জারির খরচ:

  • গড় খরচ: ৪০,০০০ – ১,৫০,০০০ টাকা (দুই চোখের জন্য)
  • খরচ নির্ভর করে প্রযুক্তি, হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের অভিজ্ঞতার উপর।

🏥 বাংলাদেশে ল্যাসিক কোথায় করা যায়?

সেরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ:

  • ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
  • চক্ষু ফাউন্ডেশন, ধানমন্ডি
  • লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল, আগারগাঁও
  • ইসলামিক চক্ষু হাসপাতাল, মিরপুর
  • ল্যাসিক সাইট সেন্টার, গুলশান, ঢাকা।
(খরচ ও সুবিধা জেনে আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ভালো)

🔬 চোখ ল্যাসিক সার্জারির উপযুক্ত কি না—

  • চোখের সূক্ষ্ম ত্রুটি নির্ণয়ের জন্য আধুনিক মেশিনে বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা করা হয়।
  • কর্নিয়ার পুরুত্ব, গঠন, ও ধরন পরিমাপ করে দেখা হয় এটি লেজার সার্জারির উপযোগী কিনা।
  • চোখের মণি (Pupil) বড় করে রেটিনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
  • চোখের চশমার পাওয়ার কতটুকু এবং কতটা স্থায়ী তা যাচাই করা হয়।
  • গ্লুকোমা (চোখের চাপ) আছে কি না সেটি নির্ভরযোগ্যভাবে চেক করা হয়।
  • কর্নিয়ায় কেরাটোকোনাস বা বিকৃতি রয়েছে কিনা, কিংবা ভবিষ্যতে হতে পারে কি না সেটি যাচাই করা হয়।
  • যাদের ড্রাই আই সিনড্রোম রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চোখের আর্দ্রতা ও ঝুঁকি যাচাই করা হয়।
  • রোগীর পেশা, দৈনন্দিন অভ্যাস এবং শখ বিবেচনায় রেখে পাওয়ার কারেকশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

🛑 যদি আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী হন:

  • পরীক্ষার অন্তত ৭ দিন আগে থেকে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত।
  • এটি কর্নিয়ার স্বাভাবিক গঠন ফিরে পেতে সহায়তা করে।

❌ যদি আপনি ল্যাসিকের জন্য উপযুক্ত না হন:

  • ডাক্তার জানিয়ে দেবেন কী কারণে আপনি উপযুক্ত নন।
  • আপনি চাইলে বিকল্প রিফ্র্যাকটিভ সার্জারি (যেমন PRK বা ICL) নিয়ে ভাবতে পারেন।
  • অথবা আগের মতো চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন।

📄 টেস্টে যাওয়ার সময় যা সঙ্গে নেওয়া জরুরি:

  • আপনার পূর্ববর্তী চশমার প্রেসক্রিপশন
  • কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের তথ্য (যদি থাকে)
  • অতীতে কোনো চোখের সমস্যা হয়ে থাকলে তার রিপোর্ট।

🔧 ল্যাসিক সার্জারির আগে নিজেকে প্রস্তুত করার ধাপসমূহঃ

  • 👓 কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
    যদি আপনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাহলে অপারেশনের ১ থেকে ৩ সপ্তাহ আগে তা পরা বন্ধ করে চশমা ব্যবহার শুরু করতে হবে। কারণ কন্টাক্ট লেন্স কর্নিয়ার স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তন করে, যা সঠিক টেস্ট ও সার্জারির জন্য বাধা হতে পারে।
  • 🚫 অপারেশনের দিনে কী কী এড়িয়ে চলবেন:
    সার্জারির নির্ধারিত দিনে চোখ বা মুখে কোনো ধরনের মেকআপ, লোশন, ক্রিম বা পারফিউম ব্যবহার করবেন না। এসব কেমিক্যাল অপারেশনের সময় চোখে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • 🚗 সঙ্গী নিয়ে আসা আবশ্যক:
    ল্যাসিক অপারেশনের পরে আপনি নিজে গাড়ি চালিয়ে বা একা বাসায় যেতে পারবেন না। তাই একজন বিশ্বস্ত সঙ্গীকে সাথে আনতে হবে, যিনি অপারেশনের পর আপনাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবেন।

📝 সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর:

সার্জারির পূর্বে ডাক্তার আপনাকে অপারেশন পদ্ধতি, বিকল্প সমাধান, সম্ভাব্য ঝুঁকি ও জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। সবকিছু বুঝে ও সন্তুষ্ট হয়ে আপনাকে একটি লিখিত সম্মতিপত্রে (Consent Form) স্বাক্ষর করতে হবে, যা আন্তর্জাতিকভাবে একটি বাধ্যতামূলক নিয়ম।

ল্যাসিক সার্জারি কিভাবে করা হয়?

ল্যাসিক (LASIK) সার্জারি সাধারণত দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সার্জারিটি নির্ভুল ও ব্যথামুক্তভাবে সম্পন্ন করা যায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন হসপিটালে ল্যাসিক সার্জারির জন্য লেজার প্রযুক্তি ও মাইক্রোকেরাটম হিসেবে বিশেষ বিশ্ব বিখ্যাত মেশিনগুলো ব্যবহার করা হয়।

অপারেশনের পূর্ব প্রস্তুতি

ল্যাসিক করার আগে রোগীকে কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়:

  • সার্জারির আগের দিন থেকে প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর চোখে এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হয় (দৈনিক ৪ বার)
  • কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারী হলে সার্জারির অন্তত ৭ দিন আগে লেন্স পড়া বন্ধ রাখতে হয়
  • নির্ধারিত দিনে চোখে কোনো মেকআপ, ক্রিম বা পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না
  • অপারেশনের দিন রোগীর সঙ্গে অবশ্যই একজন অভিভাবক থাকতে হবে

অপারেশন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে ল্যাসিক

১. চোখে অবশ করার প্রস্তুতি:

  • অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পর রোগীকে লেজার বেডে শুতে বলা হয়
  • চোখে অনুভূতিনাশক আইড্রপ প্রয়োগ করা হয়
  • চোখের পলক না পড়ে, তাই আইলিড হোল্ডার ব্যবহার করা হয়
  • অপর চোখটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। 

২. কর্নিয়ায় ফ্ল্যাপ তৈরি

  • মাইক্রোকেরাটম যন্ত্রের সাহায্যে কর্নিয়ায় একটি পাতলা ফ্ল্যাপ তৈরি করা হয়
  • এ সময় রোগী সামান্য চাপ অনুভব করেন এবং কয়েক সেকেন্ড ঝাপসা দেখতে পারেন
  • এই ধাপে চোখ স্থির রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

৩. লেজার প্রয়োগ

  • কর্নিয়ার ফ্ল্যাপটি সরিয়ে রাখা হয়
  • রোগীকে লেজারের সবুজ আলো ও শব্দের সাথে পরিচিত হতে বলা হয়
  • প্রয়োজন অনুযায়ী ১৫ থেকে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে লেজার রশ্মি দিয়ে চশমার পাওয়ার কারেকশন করা হয়
  • এই সময়ে কেবল লক্ষ্যবস্তুতে চোখ স্থির রাখা এবং সার্জনের নির্দেশ মানা জরুরি। 

৪. অপারেশন সম্পন্ন

  • লেজার শেষ হলে চোখ ধুয়ে ফেলা হয়
  • সরিয়ে রাখা ফ্ল্যাপটি পুনরায় আগের অবস্থানে বসানো হয়
  • কোনো সেলাই, ইনজেকশন বা ব্যান্ডেজের প্রয়োজন হয় না।

সার্জারির পরবর্তী ধাপসমূহ – ল্যাসিক অপারেশনের পর কী করবেন?

ল্যাসিক অপারেশনের পর সঠিক নিয়ম মেনে চোখের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সার্জারির পরবর্তী ধাপগুলো সহজ ভাষায় ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো, যা চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে:
  • সার্জারির পরপরই আপনার চোখে প্রাথমিক আইড্রপ দেওয়া হবে।
  • এরপর আপনাকে বিশ্রামের জন্য একটি রিকভারি রুমে নেওয়া হবে।
  • সার্জন স্লিট ল্যাম্প দিয়ে আপনার চোখ পরীক্ষা করে দেখবেন।
  • ওষুধ ও চোখের ড্রপ কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

⚠️ সাধারণ কিছু উপসর্গ:

  • অপারেশনের পরপরই চোখ লাল হতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, এবং কারও কারও হালকা মাথা-ব্যথাও হতে পারে – এগুলো সবই স্বাভাবিক।
  • মাথা-ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেইনকিলার ট্যাবলেট খেতে পারেন।
  • চোখ আলোক সংবেদনশীল হতে পারে, তাই ক’দিন বাইরে বের হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। তবে ঘরে থাকলে সানগ্লাসের প্রয়োজন নেই।

💤 বাড়ি ফিরে করণীয়:

  • অপারেশনের পরে চোখে সামান্য খচখচে লাগা স্বাভাবিক। তাই বাসায় ফিরে ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই জরুরি। এতে চোখের অস্বস্তি কমে যাবে।
  • কখনোই চোখ কচলাবেন না। কারণ অপারেশনের সময় কর্নিয়ায় যে লেয়ারটি তোলা হয়, তা সরে গিয়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
  • অপারেশনের দিন দৃষ্টি কিছুটা ঝাপসা থাকতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরদিন সকালেই দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

🕒 পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে চোখের যত্ন:

  • চোখ সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
  • ডাক্তার দেওয়া ওষুধ ও আইড্রপ সময়মতো ও নিয়মমাফিক ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • চোখে ধুলাবালি যাতে না লাগে, সেজন্য ১-২ দিন বাড়িতে থাকাই ভালো।
  • লেখাপড়া, কম্পিউটারে কাজ, টিভি দেখা—এসব কার্যক্রম পরদিন থেকেই করা যায়।
  • চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া বা খেলাধুলা অন্তত দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখা উচিত।
  • অপারেশনের পরদিন থেকেই গলার নিচ থেকে গোসল করা যাবে।

👓 বাড়তি কিছু লক্ষণ ও পরামর্শ:

  • কিছু রোগীর দৃষ্টিশক্তিতে হালকা ওঠানামা দেখা দিতে পারে, এটা স্বাভাবিক। সপ্তাহ দু’এক বা কারও ক্ষেত্রে এক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
  • চোখে শুষ্কভাব লাগলে, ডাক্তার যে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ দিয়েছেন তা ব্যবহার করতে হবে।
  • এই শুষ্কতা অস্থায়ী, অশ্রুগ্রন্থি কিছুদিন পর স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করে।
  • যদি চোখে ব্যতিক্রমধর্মী সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • ঢাকার বাইরের রোগীরা চাইলে নিকটস্থ চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

📅 ফলো-আপ অপরিহার্য:

  • অপারেশনের পরদিন অবশ্যই ফলো-আপে যেতে হবে।
  • পরবর্তী ফলোআপ হয়ত সপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে, কিন্তু নিয়মিত ফলো-আপ না করলে চোখে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

🎯 পরিশেষে

ল্যাসিক সার্জারি নিয়ে হাজারো মানুষের অভিজ্ঞতা বলে – এটা শুধু একটি চিকিৎসা নয়, বরং একটি নতুন জীবনের শুরু। যারা বছরের পর বছর ধরে চশমা বা কন্টাক্ট লেন্সের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তারা বলছেন – ল্যাসিক অপারেশনের পর যেন পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখা শুরু করেছেন। কেউ বলেছেন, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চশমা খুঁজতে না হওয়াটা জীবনের সবচেয়ে আরামদায়ক অনুভূতি। কেউবা বলেছেন, প্রথমবারের মতো পরিষ্কার আকাশের তারা দেখতে পেরে চোখ ভরে কান্না এসেছে।

সঠিক জায়গায়, অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ল্যাসিক করালে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সীমিত এবং সাময়িক। বাংলাদেশেও এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে নিরাপদে ল্যাসিক করানো সম্ভব।

তাই, আপনি যদি ভাবেন – চোখের মাইনাস পাওয়ার থেকে মুক্তি পেতে চান, আরেকটু স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান, তাহলে ল্যাসিক হতে পারে আপনার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত।

👉 আপনার চোখের পরবর্তী যাত্রা হোক স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য ও চশমামুক্ত!

ব্লগপোস্টটি পরে ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করবেন ও আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে টাইমলাইনে সংরক্ষণ করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

ল্যাসিক অপারেশন কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশে ল্যাসিক অপারেশনের খরচ সাধারণত ৪০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি নির্ভর করে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও হাসপাতালের ওপর।

চোখের ল্যাসিক অপারেশন কিভাবে করে?

ল্যাসিক অপারেশনে কর্নিয়ার একটি পাতলা ফ্ল্যাপ কেটে তোলা হয়, তারপর লেজার রশ্মির সাহায্যে চশমার পাওয়ার ঠিক করা হয় এবং ফ্ল্যাপটি পুনরায় বসিয়ে দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত এবং ব্যথাহীন।

ল্যাসিক চোখের অপারেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?

প্রাথমিকভাবে চোখে শুষ্কভাব, আলোতে সেনসিটিভিটি, হ্যালো দেখা, বা দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাময়িক এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।

ল্যাসিক করলে কি চিরতরে চশমা মুক্ত হওয়া যায়?

হ্যাঁ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগী চশমা ছাড়াই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে পুনরায় চশমা প্রয়োজন হতে পারে (বিশেষ করে প্রেসবাইওপিয়া)।

ল্যাসিক সার্জারির পর করণীয় কী?

অপারেশনের পর কিছুদিন চোখে পানি, ধুলোবালি ও আলো থেকে দূরে থাকতে হবে। ডাক্তারের দেওয়া আইড্রপ নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে এবং নির্ধারিত ফলোআপ চেকআপ করতে হবে।

ল্যাসিক করলে কি চোখে সমস্যা হতে পারে?

ল্যাসিক একটি নিরাপদ পদ্ধতি হলেও অল্প কিছু ক্ষেত্রে চোখে শুকনোভাব, হ্যালো ইফেক্ট বা রিগ্রেশন হতে পারে। অভিজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে করালে ঝুঁকি কমে যায়।

বাংলাদেশের ল্যাসিক অপারেশন কোথায় করানো যায়?

বাংলাদেশে শেফা-জেনিথ, ইস্পাহানি ইসলামিয়া, অপটিকাল জোন, বসুন্ধরা আই হাসপাতালসহ অনেক আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে ল্যাসিক সার্জারি করানো যায়।

ল্যাসিক অপারেশন কতদিন বিশ্রাম নিতে হয়?

ল্যাসিকের পর সাধারণত ৩-৫ দিন বিশ্রাম নেওয়া যথেষ্ট। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক কাজে ফিরতে এক সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।

ল্যাসিক অপারেশনের আগে কি করা উচিত?

অপারেশনের আগে কন্টাক্ট লেন্স পরা বন্ধ করতে হবে, চোখের পূর্ণ পরীক্ষা করাতে হবে, মেকআপ ও সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী চোখে এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এড ব্লকার Extention/Addon দেখা যাচ্ছে!
আপনার ব্রাউজারে বিজ্ঞাপন বা এড ব্লকার Extention বা Plugin ব্যবহার করছেন।
আসলে, বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আমাদের যা উপার্জন হয় তা আমাদের সাইটি চালানোর শক্তি ও উৎসাহ জাগায়। তাই অনুরোধ করছি, আপনার ব্রাউজারের Extention বা Addon থেকে আমাদের সাইটটি Whitelist করুন। ধন্যবাদ!